সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের আর্থিক (আইডি এ ক্রেডিট) সহায়তায় ২০০৯ সালে ডিজএ্যাবিলিটি অ্যান্ড চিল্ড্রেন এ্যাট রিস্ক (DCAR) শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করে এবং জুন ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। DCAR প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতায়ন, প্রতিবন্ধী সেবাসমূহের প্রসার, সচেতনতা বাড়ানো, দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সেবাদানকারী নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও এর সম্প্রসারণ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।
ডিজএ্যাবিলিটি অ্যান্ড চিলড্রেন এ্যাট রিস্ক (DCAR) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডিজএ্যাবিলিটি বিষয়ক কার্যক্রম জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক এবং ঝুঁকিতে থাকা শিশু বিষয়ক কার্যক্রম সার্ভিসেস ফর চিলড্রেন এ্যাট রিস্ক (SCAR) নামে সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। SCAR প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সুরক্ষার জন্য আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে পরিবার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে তাদের পুনঃএকীকরণ/পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে দেশের তৎকালীন ০৭ টি বিভাগীয় শহরে (গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর) ০৭ টি ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড প্রটেকশন সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে প্রকল্পের বাস্তব কার্যক্রম শুরু হয়।প্রকল্পের সেবার পরিধি বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরগুনা ও কক্সবাজার জেলায় ৪টি নতুন কেন্দ্রের সংস্থান করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নিহত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হলেও শেখ রাসেলের স্মৃতি স্মরণে কোন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়নি। অথচ শেখ রাসেল নামের সাথে সমগ্র জাতির আবেগ জড়িত, এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তার স্মৃতি স্মরণে প্রকল্পের ২য় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নামকরণ করা হয়।
জুন ২০১৬ সালে স্কার প্রকল্পটি সমাপ্তির পর এর আওতায় পরিচালিত ১১টি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ঝুঁকিতে থাকা বিপন্ন শিশুদের সেবা কার্যক্রমের অপরিহার্যতা বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২২/০৫/২০১৬ তারিখ একটি সার- সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন এবং সদয় নির্দেশনা অনুযায়ী বাজেটে বাৎসরিক ভিত্তিতে সরকারের সাহায্য মঞ্জুরি (কল্যাণ/আবর্তক অনুদান) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে ।
“একটি শিশুও রাস্তায় ঘুমাবে না; একটি শিশুও এভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অভিপ্রায় ও মহতী নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং সুবিধাবঞ্চিত ও বিপন্ন শিশুদের সুরক্ষায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহের সক্ষমতা, চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যমান জনবল দ্বারা ২০১৭ সালে জামালপুর এবং ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর শিবগঞ্জ উপজেলায় আরো ০২ (দুইটি) নতুন কেন্দ্র চালু করা হয়। বর্তমান সরকারের সময় সমগ্র বাংলাদেশে ১৩টি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারের শিশু বান্ধব কার্যক্রমের অংশ হিসাবে পরিচালিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সমূহের সেবা প্রদানমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে গণমানুষের মাঝে ব্যাপক চাহিদা ও সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। দিনে দিনে ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ মানুষের ভালবাসার একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী শিশু সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের অপরিহার্যতা বিবেচনায় বিদ্যমান দক্ষ ও বিশেষায়িত জনবলকে সরকারের নিয়মিত রাজস্ব খাতভুক্ত করার আবশ্যকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৫/১১/২০২০ তারিখ আরো একটি সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন।
কর্ম এলাকা: গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরগুনা, কক্সবাজার, জামালপুর ও শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় স্থাপিত ১৩টি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত বিপন্ন/ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সেবা প্রদান করে পরিবার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পুনঃএকীকরণ/পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়।
উপকারভোগী শিশু: কেন্দ্রসমূহে ০৬ থেকে অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের পথ শিশু, শ্রমে নিয়োজিত শিশু, মাতা-পিতার স্নেহ বঞ্চিত, গৃহকর্মে নিয়োজিত, পাচার থেকে উদ্ধার, হারিয়ে যাওয়া, বাল্য বিবাহের শিকার, নির্যাতনের শিকার শিশুদের দিবাকালীন/রাত্রিকালীন/সার্বক্ষনিক আশ্রয় ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। সেবা প্রদানের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ০২ (দুই) বছর। তবে প্রয়োজনের নিরিখে জেলা স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিশুর কেন্দ্রে অবস্থানের মেয়াদ আরো ০১ (এক) বছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে ।
প্রদত্ত সেবা/সুবিধাসমূহ: প্রতিটি কেন্দ্রে আবাসন সুবিধাসহ খাদ্য, প্রয়োজনীয় পোষাক, স্বাস্থ্যসেবা, মনো-সামাজিক সহায়তা, জীবন দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষা (আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক) ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতিটি শিশুকে সকাল ও বিকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রতিমাসে নির্ধারিত দিন ছাড়াও জাতীয় দিবস, ধর্মীয় উৎসবসহ বিশেষ দিবসে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। নিবাসী শিশুদের বছরে ০৪ (চার) সেট পোষাক, ০২ (দুই) সেট উৎসব পোষাক এবং শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া স্কুলগামী শিশুদের জন্য স্কুলের ড্রেস কোড অনুযায়ী পোষাক সরবরাহ করা হয়।
সক্ষমতার ভিত্তিতে কেন্দ্রে অবস্থানরত শিশুদের আনুষ্ঠানিক/উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতাভুক্ত শিশুদের স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করে শিক্ষা অব্যাহত রাখা হয়। অক্ষরজ্ঞানহীন বা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া নিবাসী শিশুদের সক্ষমতার ভিত্তিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়।
সেবার আওতায় আসা শিশুদের Hands-off Skill এবং Hands-on Skill প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। Hands-off Skill এ শিশু মূলতঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগীয় ও মানসিক চাপে টিকে থাকা, কার্যকরি যোগাযোগ, সমঝোতা ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করে। Hands-on Skill এ ১৪ বছর উর্ধ্ব শিশুদেরকে আগ্রহ ও সক্ষমতার ভিত্তিতে স্থানীয় চাহিদা নিরূপণপূর্বক বিউটিফিকেশন, টেইলারিং, ব্লক-বাটিক, পেইন্ট/আর্ট (ব্যানার/সাইনবোর্ড), জুতা বানানো, অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রিক্যাল ইত্যাদি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে শিশুদের সমাজের মূল ধারার সাথে একীভূত করার লক্ষ্যে কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস হিসেবে ঝুঁকিবিহীন কাজে নিয়োজিত করা হয়। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে গঠিত জেলা স্টিয়ারিং কমিটি স্থানীয়ভাবে কেন্দ্রের নিবাসী শিশুদের সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শ, তদারকি ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।
স্থায়ী অবকাঠামো: শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত ও শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ এবং কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃত করণের লক্ষ্যে সরকারের অর্থায়নে দেশের ১৯ টি জেলায় কেন্দ্র স্থাপনের জন্য শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সমাজসেবা অধিদফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখায় প্রস্তুত করা হয়েছে। ডিপিপি টি প্রক্রিয়াকরণসহ পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করা প্রয়োজন।প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুড়ান্ত ডিপিপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপকারভোগী শিশুর সংখ্যা :
প্রতিটি কেন্দ্রে পৃথক ভবনে সর্বোচ্চ ১০০ ছেলে শিশু ও ১০০ মেয়ে শিশুর আবাসন সুবিধা রয়েছে। আগস্ট ২০১২ থেকে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত ১৩টি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ১৫৭৫৩ জন (৮২২৪ জন বালক ও ৭৫২৯ জন বালিকা) শিশুকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৪৯৭ জন (৭১৫৮ জন ছেলে ও ৬৩৩৯ জন মেয়ে) শিশুকে তাদের পরিবার, আত্মীয় কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পুনঃএকীকরণ বা পুনর্বাসন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস